আপনারা যারা ভ্রমণ ভালোবাসেন, তাদের কাছে শ্রীলঙ্কা নিঃসন্দেহে স্বপ্নের মতো একটি গন্তব্য, তাই না? আমি যখন প্রথমবার এই সুন্দর দ্বীপরাষ্ট্রটিতে পা রেখেছিলাম, তখন এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সংস্কৃতির বৈচিত্র্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তবে সত্যি বলতে, প্রথমবার যাওয়ার আগে কী কী সঙ্গে নেব, তা নিয়ে বেশ ধন্দে ছিলাম। ভাবছিলাম, কী বাদ দিলে চলবে আর কী নিলে যাত্রা আরও মসৃণ হবে?
অনেক সময় দেখা যায়, ছোটখাটো কিছু জিনিস ভুলে যাওয়ার কারণে পুরো ট্রিপের মজাটাই মাটি হয়ে যায়। আবার অনেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ব্যাগ ভারী করে ফেলেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন, সঠিক প্রস্তুতি আপনাকে অযথা ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে দেবে আর আপনার শ্রীলঙ্কা ভ্রমণকে করে তুলবে আরও আনন্দময় ও স্বস্তিদায়ক। এখনকার দিনে স্মার্ট ট্র্যাভেলিং মানেই কিন্তু বুদ্ধি করে ব্যাগ গোছানো!
এই ব্লগ পোস্টটি সেই সব দ্বিধা দূর করার জন্যই, যেখানে আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা এবং লেটেস্ট ট্রেন্ডের ওপর ভিত্তি করে শ্রীলঙ্কা ভ্রমণের জন্য আপনার কি কি জিনিসপত্র একদমই বাদ দেওয়া উচিত নয়, তার একটা বিস্তারিত তালিকা তৈরি করেছি। চলুন তাহলে, শ্রীলঙ্কার অ্যাডভেঞ্চার শুরু করার আগে জেনে নিই আপনার ব্যাগে কী কী থাকা চাই!
পোশাক-পরিচ্ছদ: আরামদায়ক ও আবহাওয়া উপযোগী সমাধান

শ্রীলঙ্কার আবহাওয়া যেমন বৈচিত্র্যময়, তেমনই অপ্রত্যাশিত। তাই আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এমন পোশাক নিতে হবে যা আপনাকে দিনের বেলা কড়া রোদের হাত থেকে বাঁচাবে, আবার সন্ধ্যায় অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি বা হালকা ঠান্ডাতেও স্বস্তি দেবে। এখানে বেশিরভাগ দিনই বেশ গরম আর আর্দ্র থাকে, তাই সুতির হালকা এবং ঢিলেঢালা পোশাক আপনার সেরা সঙ্গী হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে লক্ষ্য করেছি, যারা সিনথেটিক বা আঁটসাঁট পোশাক পরেন, তাদের অস্বস্তিটা একটু বেশি হয়। শাড়ি বা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরার অভিজ্ঞতা যদি আপনার না থাকে, তবে অযথা চেষ্টা না করাই ভালো। হালকা রঙের পোশাক তাপ শোষণ কম করে, তাই রোদে ঘোরাঘুরির জন্য একদম পারফেক্ট। আর মনে রাখবেন, শ্রীলঙ্কার কিছু মন্দিরে প্রবেশ করতে হলে কাঁধ এবং হাঁটু ঢাকা পোশাক পরা বাধ্যতামূলক। তাই লম্বা স্কার্ট, প্যান্ট বা শাল অবশ্যই সঙ্গে নেবেন। আমি একবার একটি মন্দিরে ঢুকতে গিয়ে দেখি আমার কাঁধ ঢাকা নেই, তখন বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে একটি শাল কিনতে হয়েছিল, যা হয়তো আমার স্টাইলের সাথে একদমই যাচ্ছিল না! তাই আগে থেকে প্রস্তুতি নিলে এই ধরনের ছোটখাটো ঝামেলা এড়ানো যায়। কিছু আরামদায়ক টি-শার্ট, টপস, শর্টস বা মিডি ড্রেস নিতে পারেন যা সহজে শুকিয়ে যায়। এর ফলে আপনাকে বারবার লন্ড্রি খুঁজতে হবে না, যা ভ্রমণের সময় বাঁচিয়ে দেয়। রাতে বের হওয়ার জন্য বা কোনো বিশেষ ডিনারের জন্য একটা সুন্দর ক্যাজুয়াল পোশাকও রাখতে পারেন, কিন্তু খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ কিছু না নেওয়াই ভালো, কারণ এখানে ক্যাজুয়াল স্টাইলই বেশি চলে।
হালকা ও বাতাস চলাচল করে এমন পোশাক
আমার প্রথমবার শ্রীলঙ্কা ভ্রমণের সময় ব্যাগ গুছাতে গিয়ে আমি এই বিষয়টায় একটু বেশি মনোযোগ দিয়েছিলাম। সারাদিন ঘোরাঘুরির জন্য আমি সুতির ঢিলেঢালা টপস, লিনেন শার্ট এবং আরামদায়ক স্কার্ট নিয়েছিলাম। এতে দিনের গরমেও আমি বেশ স্বস্তিতে ছিলাম। এই ধরনের পোশাক সহজে বাতাস চলাচল করতে দেয়, তাই ঘাম জমে থাকার সমস্যাও কম হয়। আর মনে রাখবেন, এখানে আর্দ্রতা বেশ বেশি, তাই দ্রুত শুকিয়ে যায় এমন ফেব্রিকের পোশাক নিলে সুবিধা হয়। বিশেষ করে যদি আপনি ব্যাকপ্যাকিং করেন বা ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করেন, তখন রাতে ধুয়ে সকালে পরতে পারার সুবিধাটা দারুণ কাজে লাগে। আমার মনে আছে একবার পাহাড়ি এলাকায় গিয়েছিলাম, তখন রাতের বেলা হঠাৎ হালকা ঠান্ডা লেগেছিল। তখন একটা হালকা সোয়েটার বা জ্যাকেট কাজে দিতে পারতো। তাই দিনের বেলার পোশাকের পাশাপাশি রাতে পরার জন্য একটা পাতলা জ্যাকেট বা শাল রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
সাঁতারের পোশাক ও মন্দির পরিদর্শনের জন্য পোশাক
শ্রীলঙ্কা মানেই সমুদ্রসৈকত আর নীল জল! তাই আপনার সাঁতারের পোশাকটা একদমই ভুললে চলবে না। আমি তো সৈকতে নামার জন্য একজোড়া অতিরিক্ত সাঁতারের পোশাক নিয়ে যাই, যাতে একটা ভেজা থাকলেও অন্যটা ব্যবহার করতে পারি। মনে রাখবেন, এখানে বিভিন্ন ধরনের সৈকত আছে, কিছু জায়গায় হয়তো পাবলিক বীচে একটু বেশি লোক থাকে, আবার কিছু জায়গা বেশ নির্জন। তাই আপনার পছন্দ অনুযায়ী সাঁতারের পোশাক বেছে নিন। আর যেমনটা আগেই বলেছি, এখানকার ঐতিহাসিক মন্দির বা পবিত্র স্থানগুলোতে প্রবেশ করতে হলে অবশ্যই শালীন পোশাক পরতে হবে। আমার এক বন্ধু একবার মন্দিরে শার্টলেস হয়ে যেতে চেয়েছিল, পরে জানতে পারলো ভেতরে ঢুকতে পারবে না। কাঁধ আর হাঁটু ঢাকা না থাকলে আপনাকে হয়তো প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না অথবা অতিরিক্ত টাকা দিয়ে শাল কিনতে হবে। তাই লম্বা প্যান্ট, ম্যাক্সি ড্রেস, বা শাল সাথে রাখা খুবই জরুরি। এগুলো শুধু আপনাকে শালীনতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে না, বরং অপ্রত্যাশিত গরম বা ঠান্ডার থেকেও সুরক্ষা দেবে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রাথমিক প্রস্তুতি
ভ্রমণে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার চেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা আর হয় না। আমি একবার মালয়েশিয়াতে গিয়েছিলাম, সেখানে হঠাৎ করে পেটে সমস্যা হয়েছিল। তখন মনে হয়েছিল, ইশ! যদি সাথে কিছু প্রাথমিক ঔষধ থাকত! শ্রীলঙ্কাতে যাওয়ার আগেও আমার এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছি। সেখানকার স্থানীয় ফার্মেসিগুলোতে সব ঔষধ সবসময় নাও পাওয়া যেতে পারে, আর পেলেও ভাষার বাধায় সমস্যা হতে পারে। তাই নিজের পরিচিত এবং প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র অবশ্যই সাথে রাখুন। যেমন, জ্বর, সর্দি, কাশি, পেটে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, ব্যথানাশক এবং অ্যালার্জির ঔষধ। এছাড়া, ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম, মশা তাড়ানোর স্প্রে, সানস্ক্রিন এবং ছোট একটি ফার্স্ট এইড কিট অবশ্যই ব্যাগে রাখবেন। আমি নিজে মশা তাড়ানোর স্প্রেটা খুবই গুরুত্ব সহকারে নিই, কারণ শ্রীলঙ্কার আর্দ্র পরিবেশে মশার উপদ্রব বেশ বেশি হতে পারে, আর মশা থেকে বাঁচা মানেই ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার মতো রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকা। আর সানস্ক্রিন ছাড়া রোদে বের হওয়া মানে ত্বক পুড়িয়ে ফেলা! আমি ব্যক্তিগতভাবে SPF 50+ এর সানস্ক্রিন ব্যবহার করি, বিশেষ করে সৈকতে থাকলে। যদি আপনার কোনো নির্দিষ্ট শারীরিক সমস্যা থাকে, তাহলে সেই সংক্রান্ত ঔষধপত্র এবং আপনার ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ইংরেজিতে সাথে রাখুন, যাতে প্রয়োজন হলে স্থানীয় চিকিৎসককে দেখাতে পারেন। ছোটখাটো আঘাত বা অসুস্থতার জন্য যেন আপনার পুরো ভ্রমণটাই মাটি না হয়ে যায়, সেই দিকে খেয়াল রাখা উচিত।
প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম ও ঔষধপত্র
আপনার ব্যাগে একটি ছোট ফার্স্ট এইড কিট রাখা অত্যাবশ্যক। এর মধ্যে অ্যান্টিসেপটিক ওয়াইপস, বিভিন্ন আকারের ব্যান্ডেজ, গজ, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম, ব্যথানাশক (যেমন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন), ডায়রিয়ার ঔষধ, পেটের গোলমালের ঔষধ, অ্যালার্জির ঔষধ এবং জ্বরের ঔষধ থাকা উচিত। আমি সবসময় আমার কিটে একটি ছোট কাঁচি আর ট্যুইজারও রাখি, যা ছোটখাটো কাজে লাগে। একবার আমার বন্ধুর পায়ে কাঁটা ঢুকে গিয়েছিল, তখন এই ট্যুইজারটা খুব কাজে এসেছিল। যদি আপনি নিয়মিত কোনো ঔষধ সেবন করেন, তাহলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঔষধপত্র নিন এবং সেগুলোর প্রেসক্রিপশনের একটি কপি সাথে রাখুন। এটি জরুরি অবস্থার জন্য খুবই উপকারী। আপনার চেনা ব্র্যান্ডের ঔষধপত্র না পেলে হঠাৎ করে অন্য কোনো ব্র্যান্ডের ঔষধ ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই সবদিক চিন্তা করে নিজের প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র গুছিয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
সূর্য সুরক্ষা ও মশা নিবারক
শ্রীলঙ্কার তীব্র সূর্যের তাপ থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন (কমপক্ষে SPF 30) এবং সানগ্লাস অপরিহার্য। আমি একবার সানস্ক্রিন না নিয়ে সৈকতে চলে গিয়েছিলাম আর তারপর সারা শরীর লাল হয়ে গিয়েছিল! এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি শিখেছি যে সানস্ক্রিন কতটা জরুরি। তাই উচ্চ SPF যুক্ত একটি ভালো মানের সানস্ক্রিন নিন এবং প্রতি কয়েক ঘন্টা অন্তর তা পুনরায় লাগান, বিশেষ করে যদি আপনি সাঁতার কাটেন বা বেশি ঘামেন। একটি টুপি বা ক্যাপও আপনার মুখ এবং মাথাকে সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। আর মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে মশা তাড়ানোর স্প্রে বা লোশন সঙ্গে রাখুন। এখানে মশার কারণে ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে সন্ধ্যাবেলায় বা ভেতরের দিকে forested এলাকায় গেলে মশা তাড়ানোর জিনিসটা দারুণ কাজে দেয়। আমার পরামর্শ হলো, প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি মশা নিবারক ব্যবহার করতে পারেন, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর নয়।
গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও অর্থ ব্যবস্থাপনা
ভ্রমণে যাওয়ার আগে কাগজপত্র গোছানো আমার কাছে একটা বড় টাস্ক মনে হয়, কিন্তু এর গুরুত্ব বলে বোঝানো যাবে না। একবার থাইল্যান্ডে আমার বন্ধু তার পাসপোর্টের ফটোকপি নিতে ভুলে গিয়েছিল, আর হোটেলে চেক-ইন করতে গিয়ে সে কী বিপদে পড়েছিল! তাই আপনার পাসপোর্ট, ভিসা, বিমানের টিকিট, হোটেলের রিজার্ভেশন এবং ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্সের সমস্ত কাগজপত্র হাতের কাছে রাখুন। শুধু মূল কপি নয়, সেগুলোর ফটোকপি এবং ডিজিটাল কপিও আপনার ইমেইল বা ক্লাউড স্টোরেজে সেভ করে রাখুন। আমি সবসময় আমার ফোন, গুগল ড্রাইভ এবং একটি ছোট পেনড্রাইভে এই সব ডকুমেন্টসের সফট কপি রাখি। অপ্রত্যাশিতভাবে কোনো কিছু হারিয়ে গেলে এই ডিজিটাল কপিগুলো আপনাকে অনেক সাহায্য করবে। আর অর্থ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে, শ্রীলঙ্কার কারেন্সি হলো শ্রীলঙ্কান রুপি (LKR)। আপনি কিছু নগদ টাকা সঙ্গে রাখতে পারেন, তবে এর পাশাপাশি ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ব্যবহার করা ভালো। বিভিন্ন জায়গায় এটিএম (ATM) বুথ পাওয়া যায়, কিন্তু ছোট শহর বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে এটিএম খুঁজে পেতে সমস্যা হতে পারে। তাই সব পরিস্থিতিতেই যেন আপনার অর্থের সংস্থান থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। বিদেশী এক্সচেঞ্জ রেট এবং আপনার ব্যাংকের চার্জগুলো সম্পর্কে আগে থেকে জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
পাসপোর্ট, ভিসা এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র
আপনার পাসপোর্টই হলো আপনার পরিচয় এবং ভ্রমণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি। নিশ্চিত করুন যে পাসপোর্টের মেয়াদ আপনার প্রত্যাশিত ভ্রমণের তারিখের কমপক্ষে ছয় মাস বেশি থাকে। ভিসার প্রয়োজন হলে, আগে থেকেই তার ব্যবস্থা করুন। শ্রীলঙ্কার জন্য ইলেকট্রনিক ট্র্যাভেল অথরাইজেশন (ETA) এর প্রয়োজন হতে পারে, যা অনলাইনে আবেদন করা যায়। আপনার বিমানের টিকিট, হোটেলের বুকিংয়ের নিশ্চিতকরণ, এবং ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্সের পলিসি ডকুমেন্ট—এগুলোর সব কপির পাশাপাশি ডিজিটাল কপিও রাখুন। আমি সবসময় একটি ছোট ফাইল ফোল্ডারে এই সব কাগজপত্র সাজিয়ে রাখি, যাতে যেকোনো সময় সহজে খুঁজে পেতে পারি। আর এগুলোর ছবি তুলে আপনার মোবাইলে গ্যালারিতে এবং গুগল ড্রাইভে বা ড্রপবক্সে সেভ করে রাখতে পারেন। যদি কোনো কারণে আপনার কাগজপত্র হারিয়ে যায়, তখন এই ডিজিটাল কপিগুলো আপনাকে তাৎক্ষণিক সহায়তা পেতে অনেক সাহায্য করবে।
নগদ অর্থ এবং ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড
শ্রীলঙ্কায় আপনার দৈনন্দিন খরচের জন্য কিছু নগদ শ্রীলঙ্কান রুপি রাখা ভালো। বিশেষ করে ছোট দোকান, স্থানীয় বাজার বা ট্যাক্সির মতো জায়গায় নগদ টাকা কাজে লাগে। তবে সব টাকা নগদ না রেখে, আপনার ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ। প্রধান শহরগুলোতে এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বেশিরভাগ বড় হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং দোকানে কার্ড চলে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলে বা ছোট দোকানগুলোতে কার্ডের ব্যবস্থা নাও থাকতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটি প্রি-পেইড ট্র্যাভেল কার্ড ব্যবহার করি, যেখানে আমি আমার প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা লোড করতে পারি। এর ফলে আমার মূল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকে। ভ্রমণের আগে আপনার ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে বিদেশী লেনদেন এবং চার্জ সম্পর্কে জেনে নিন, যাতে অপ্রত্যাশিত কোনো খরচ না আসে। আমি সবসময় ২-৩টি ভিন্ন কার্ড রাখি, কারণ একটি কাজ না করলে যেন অন্যটি ব্যবহার করতে পারি।
প্রযুক্তিগত অনুষঙ্গ: সংযোগ ও স্মৃতি ধরে রাখার উপকরণ
বর্তমান যুগে ভ্রমণ মানেই প্রযুক্তির ব্যবহার, তাই না? আমি যখন প্রথমদিকে ঘুরতে যেতাম, তখন শুধু একটা ক্যামেরা নিয়ে যেতাম। কিন্তু এখন স্মার্টফোন থেকে শুরু করে পাওয়ার ব্যাংক পর্যন্ত কত কিছুই না লাগে! শ্রীলঙ্কাতে এসে আপনি নিশ্চয়ই এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বন্যপ্রাণী আর ঐতিহাসিক স্থানগুলোর ছবি তুলতে চাইবেন। তাই আপনার স্মার্টফোন, ক্যামেরা এবং সেগুলোর চার্জার নিতে ভুলবেন না। ছবি তোলার জন্য অতিরিক্ত মেমরি কার্ড এবং ক্যামেরার জন্য অতিরিক্ত ব্যাটারি রাখলে আরও সুবিধা হবে। একবার আমার ক্যামেরার ব্যাটারি শেষ হয়ে গিয়েছিল আর আমি একটা দারুণ সূর্যাস্তের ছবি তুলতে পারিনি, সেই আফসোস আজও রয়ে গেছে! আর সবচেয়ে জরুরি হলো, পাওয়ার ব্যাংক বা পোর্টেবল চার্জার। এখানে সব জায়গায় ইলেক্ট্রিসিটির ব্যবস্থা নাও থাকতে পারে, বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকা বা গ্রামে। তাই আপনার ডিভাইসগুলো চার্জে রাখার জন্য পাওয়ার ব্যাংক থাকা খুবই জরুরি। এছাড়া, ইউনিভার্সাল ট্র্যাভেল অ্যাডাপ্টার নিতে ভুলবেন না, কারণ শ্রীলঙ্কার ইলেক্ট্রিসিটি সকেট আমাদের দেশের থেকে ভিন্ন হতে পারে। আমি সবসময় একটি মাল্টি-প্লাগ অ্যাডাপ্টারও সাথে নিই, যাতে একসাথে একাধিক ডিভাইস চার্জ করতে পারি। আজকাল সব কিছু ডিজিটাল, তাই কানেকটিভিটি বজায় রাখাটাও জরুরি।
স্মার্টফোন, ক্যামেরা ও চার্জার
আপনার স্মার্টফোন শুধু যোগাযোগের জন্য নয়, ম্যাপ দেখা, ছবি তোলা, জরুরি তথ্য খোঁজা এবং টিকিট বুকিংয়ের জন্যও অপরিহার্য। তাই আপনার স্মার্টফোন এবং তার চার্জার নিতে ভুলবেন না। যদি আপনি ছবি তোলার ব্যাপারে শৌখিন হন, তাহলে আপনার ডিএসএলআর বা মিররলেস ক্যামেরা, অতিরিক্ত লেন্স এবং মেমরি কার্ডও সাথে রাখুন। শ্রীলঙ্কার প্রাকৃতিক দৃশ্য, বন্যপ্রাণী এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলো এত সুন্দর যে আপনি চাইবেন সেগুলো ক্যামেরাবন্দী করতে। আমার মনে আছে একবার ক্যান্ডিতে গিয়েছিলাম, সেখানকার প্রকৃতির ছবি তুলে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আর সব ডিভাইসের জন্য সঠিক চার্জার প্যাক করতে ভুলবেন না। আমি সবসময় একটি ছোট ব্যাগে সব চার্জার আর তারগুলো গুছিয়ে রাখি, যাতে খুঁজে পেতে সমস্যা না হয়।
পাওয়ার ব্যাংক এবং ইউনিভার্সাল অ্যাডাপ্টার
ভ্রমণে স্মার্টফোন বা ক্যামেরার চার্জ শেষ হয়ে যাওয়া খুবই হতাশাজনক। একবার আমি এক নির্জন জায়গায় হারিয়ে গিয়েছিলাম, আর আমার ফোনের চার্জ শেষ! তখন মনে হয়েছিল একটা পাওয়ার ব্যাংক থাকলে কী দারুণই না হতো! তাই একটি ভালো মানের পাওয়ার ব্যাংক আপনার ব্যাগে অবশ্যই রাখুন। এটি আপনার ডিভাইসগুলোকে সারাদিন চার্জড রাখতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে যখন আপনি বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে দূরে থাকবেন। আর শ্রীলঙ্কার সকেট টাইপ আমাদের থেকে ভিন্ন হতে পারে (সাধারণত Type D বা Type G), তাই একটি ইউনিভার্সাল ট্র্যাভেল অ্যাডাপ্টার সাথে রাখুন। আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন একটি অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করি যা বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের সকেটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি আপনাকে একাধিক অ্যাডাপ্টার বহন করার ঝামেলা থেকে মুক্তি দেবে।
ব্যক্তিগত পরিচর্যার উপকরণ ও অন্যান্য খুচরা সামগ্রী

দৈনন্দিন ব্যক্তিগত পরিচর্যার জিনিসগুলো আমরা প্রায়শই উপেক্ষা করি, কিন্তু এগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা কেবল ভুলে যাওয়ার পরই বোঝা যায়। আমি একবার টুথব্রাশ নিতে ভুলে গিয়েছিলাম, আর মাঝরাতে দোকানে গিয়ে একটা নতুন টুথব্রাশ কিনতে হয়েছিল, যার দাম স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। তাই আপনার টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, সাবান, ময়েশ্চারাইজার, ডিওডোরেন্ট এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত পরিচর্যার জিনিসপত্র অবশ্যই সাথে রাখুন। ছোট ট্র্যাভেল সাইজের বোতলে এই জিনিসগুলো প্যাক করলে জায়গা বাঁচবে। আমার মনে আছে একবার আমার বন্ধুর মুখ হঠাৎ খুব শুষ্ক হয়ে গিয়েছিল সমুদ্রের হাওয়ায়, তখন সে আফসোস করছিল কেন সে ময়েশ্চারাইজার আনলো না। এছাড়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, বিশেষ করে যখন আপনি বাইরে থাকেন এবং সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার সুযোগ থাকে না। আমি সবসময় আমার ব্যাগে একটি ছোট বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখি। আর মহিলাদের জন্য, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি পণ্যের কথা ভুললে চলবে না। এসব ছোট ছোট জিনিস আপনার ভ্রমণকে অনেক বেশি আরামদায়ক করে তুলবে। এছাড়াও, যদি আপনার হেয়ার ড্রায়ার, হেয়ার স্ট্রেইটনারের মতো জিনিসের প্রয়োজন হয়, তাহলে সেগুলোর ভোল্টেজ এবং অ্যাডাপ্টারের বিষয়টি আগে থেকে যাচাই করে নেবেন।
প্রয়োজনীয় প্রসাধনী এবং পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী
আপনার টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, সাবান (অথবা বডি ওয়াশ), ময়েশ্চারাইজার এবং ডিওডোরেন্ট—এই সবকিছুই আপনার ব্যাগে থাকা উচিত। আপনি চাইলে এগুলোকে ছোট ট্র্যাভেল সাইজের বোতলে ভরে নিতে পারেন, এতে জায়গা কম নেবে এবং ব্যাগের ওজনও হালকা হবে। অনেক হোটেল হয়তো এসবের ব্যবস্থা করে, কিন্তু আপনার পছন্দের ব্র্যান্ড বা পণ্যের নিশ্চয়তা সবসময় নাও থাকতে পারে। তাই নিজের জিনিসপত্র সাথেই রাখুন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার অবশ্যই রাখবেন, কারণ পথেঘাটে বা জনাকীর্ণ স্থানে এটি খুবই দরকারি। আমি সবসময় আমার হ্যান্ডব্যাগে একটি ছোট স্যানিটাইজার রাখি, কারণ যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ধরার পর হাত পরিষ্কার করাটা জরুরি। মেয়েদের জন্য প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পুনও সাথে রাখা উচিত, কারণ এখানকার দোকানে হয়তো আপনার পরিচিত ব্র্যান্ডগুলো নাও পাওয়া যেতে পারে।
সাধারণ ব্যবহারের আনুষঙ্গিক জিনিস
এছাড়া, কিছু সাধারণ ব্যবহারের আনুষঙ্গিক জিনিস আছে যা আপনার ভ্রমণকে আরও সহজ করে তুলতে পারে। যেমন, একটি ছোট সেলাই কিট, যা আপনার পোশাক ছিঁড়ে গেলে বা বোতাম খুলে গেলে কাজে লাগতে পারে। একটি ছোট ভাঁজ করা ছাতা বা রেইনকোট নিতে পারেন, কারণ শ্রীলঙ্কাতে যেকোনো সময় বৃষ্টি আসতে পারে। আমার অভিজ্ঞতা বলে, বৃষ্টি এলে ছাতা বা রেইনকোট না থাকলে তখন দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। ছোট একটি নোটবুক এবং কলম রাখতে পারেন, জরুরি তথ্য টুকে রাখার জন্য বা ভ্রমণের ডায়েরি লেখার জন্য। আর একটি টর্চলাইট বা হেডল্যাম্প খুবই কাজে লাগে, বিশেষ করে যদি আপনি ক্যাম্পিং করেন বা রাতে কোনো অ্যাডভেঞ্চারে যান, অথবা অপ্রত্যাশিতভাবে বিদ্যুৎ চলে গেলে। আমি সবসময় ছোট একটা মাল্টিটুল রাখি, যার মধ্যে ছোট কাঁচি, ছুরি, ফাইল ইত্যাদি থাকে, যা অনেক ছোটখাটো প্রয়োজনে কাজে দেয়।
জুতা এবং অতিরিক্ত আনুষাঙ্গিক: পায়ের আরাম ও ফ্যাশন
ভ্রমণে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম হয় পায়ের। তাই জুতো বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো আপস করা উচিত নয়। আমি যখন প্রথমবার ঘুরতে গিয়েছিলাম, তখন ফ্যাশনের জন্য নতুন একটি জুতো পরেছিলাম, আর তার ফলস্বরূপ আমার পায়ে ফোস্কা পড়েছিল! সেই থেকে আমি শিখেছি যে আরামদায়ক জুতো ছাড়া ভ্রমণ অসম্পূর্ণ। শ্রীলঙ্কার জন্য, একজোড়া আরামদায়ক হাঁটার জুতো বা স্যান্ডেল অত্যাবশ্যক। আপনি যদি ট্রেকিং বা হাইকিং করার পরিকল্পনা করেন, তাহলে ভালো গ্রিপযুক্ত হাইকিং জুতো নিতে পারেন। এখানকার আবহাওয়া যেহেতু উষ্ণ, তাই বন্ধ জুতোতে পা ঘেমে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে খোলামেলা স্যান্ডেল বা ফ্লিপ-ফ্লপ বেশি আরামদায়ক হবে। সৈকতে হাঁটার জন্য বা হোটেলের ভেতরে পরার জন্য একজোড়া স্লিপার বা ফ্লিপ-ফ্লপ নিন। আর মন্দিরে ঢোকার সময় জুতো খুলতে হয়, তাই সহজে খোলা যায় এমন জুতো বেছে নিলে সুবিধা হবে। এছাড়াও, আমি সবসময় একজোড়া অতিরিক্ত আরামদায়ক মোজা রাখি, যা দীর্ঘক্ষণ হাঁটার সময় পায়ের ফোস্কা পড়া থেকে বাঁচায়।
আরামদায়ক হাঁটার জুতো ও স্যান্ডেল
ভ্রমণে আপনার পায়ের আরামই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীলঙ্কার শহরগুলোতে বা দর্শনীয় স্থানগুলোতে হাঁটাহাঁটি করার জন্য একজোড়া আরামদায়ক স্নিকার্স বা ওয়াকিং স্যান্ডেল নিন। আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন স্যান্ডেল পছন্দ করি যা দেখতে স্টাইলিশ কিন্তু পায়ে আরামদায়ক। বিশেষ করে যখন আপনি শহর ঘুরে দেখছেন বা প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটগুলোতে হাঁটছেন, তখন আরামদায়ক জুতো ছাড়া আপনার ভ্রমণটা কষ্টকর হতে পারে। আর সৈকতে বা সুইমিং পুলে ব্যবহারের জন্য একজোড়া ফ্লিপ-ফ্লপ বা স্লিপার নিতে ভুলবেন না। এগুলো ভেতরের দিকে বা হোটেলে ব্যবহার করার জন্যও বেশ সুবিধাজনক। মনে রাখবেন, এখানে মাটি বা রাস্তা কিছুটা রুক্ষ হতে পারে, তাই আপনার জুতো যেন সেই অনুযায়ী আরামদায়ক ও টেকসই হয়।
বিশেষ কার্যকলাপের জন্য অতিরিক্ত জুতো
যদি আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনায় ট্রেকিং, হাইকিং বা জলজ কার্যকলাপ (যেমন স্নোরকেলিং বা ডাইভিং) থাকে, তাহলে সেই অনুযায়ী অতিরিক্ত জুতো নিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি অ্যাডামস পিক বা কোনো পাহাড়ি অঞ্চলে ট্রেকিংয়ের পরিকল্পনা করেন, তাহলে ভালো গ্রিপযুক্ত হাইকিং জুতো আপনার জন্য অপরিহার্য। আমি একবার পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে ভুল করে সাধারণ স্নিকার্স পরেছিলাম, আর তখন পথে খুব কষ্ট হয়েছিল। আর যদি আপনি সমুদ্রের ধারে পাথুরে সৈকতে ঘোরেন বা নদীতে নামেন, তাহলে ওয়াটার সু (water shoes) নিতে পারেন, যা আপনার পা সুরক্ষিত রাখবে। অতিরিক্ত মোজা নিতে ভুলবেন না, কারণ ভিজে যাওয়া বা ঘামের কারণে মোজা পাল্টানোর প্রয়োজন হতে পারে। ভেতরের দিকে বা এয়ারকন্ডিশনড গাড়িতে পরার জন্য পাতলা মোজা আরামদায়ক হতে পারে।
অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বাড়তি কিছু
ভ্রমণে সবকিছু সবসময় পরিকল্পনা মাফিক হয় না, তাই কিছু অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, একবার আমার ব্যাগ হারিয়ে গিয়েছিল আর তখন আমার কাছে কোনো ব্যাকআপ প্ল্যান ছিল না। তাই ছোটখাটো অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য কিছু অতিরিক্ত জিনিসপত্র রাখলে আপনার চাপ অনেক কমে যাবে। আমি সবসময় একটি ছোট ভাঁজ করা ব্যাগ রাখি, যা যেকোনো অতিরিক্ত কেনাকাটা বা লন্ড্রি জিনিসপত্র রাখার জন্য কাজে লাগে। একবার আমার বন্ধুর ব্যাগ ফেটে গিয়েছিল, তখন এই অতিরিক্ত ব্যাগটা তার অনেক কাজে এসেছিল। এছাড়াও, একটি পোর্টেবল ছাতা বা রেইনকোট অবশ্যই সাথে রাখুন, কারণ শ্রীলঙ্কার আবহাওয়া যে কোনো মুহূর্তে পরিবর্তন হতে পারে এবং হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হতে পারে। বিশেষ করে বর্ষাকালে গেলে এটি আপনার জন্য অপরিহার্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে হালকা ও মজবুত একটি ছাতা বহন করি, যা রোদ এবং বৃষ্টি উভয় থেকেই সুরক্ষা দেয়। ভ্রমণের সময় কিছু ছোটখাটো সরঞ্জাম, যেমন একটি কলম, নোটবুক, পেন্সিল, এবং একটি ছোট টর্চলাইট খুবই কাজে দেয়। এই ছোট জিনিসগুলো হয়তো আপনার ভ্রমণের মূল আকর্ষণ নয়, কিন্তু যখন প্রয়োজন পড়বে তখন এর গুরুত্ব আপনি বুঝতে পারবেন।
ছোট ভাঁজ করা ব্যাগ এবং ছাতা
একটি ছোট, ভাঁজ করা যায় এমন ব্যাগ আপনার ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। আপনি এটি আপনার প্রধান ব্যাগের ভিতরে রাখতে পারেন এবং কেনাকাটা করার পরে বা অতিরিক্ত জিনিসপত্র রাখার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। আমি সবসময় একটি ক্যানভাস ব্যাগ রাখি, যা হালকা এবং সহজে ভাঁজ করা যায়। একবার আমার কেনাকাটা বেশি হয়ে যাওয়ায় মূল ব্যাগে জায়গা হচ্ছিল না, তখন এই অতিরিক্ত ব্যাগটি আমার দারুণ কাজে এসেছিল। আর শ্রীলঙ্কাতে যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে, বিশেষ করে অফ-সিজনে। তাই একটি ছোট, মজবুত ছাতা বা হালকা রেইনকোট আপনার ব্যাগে রাখুন। এটি আপনাকে হঠাৎ বৃষ্টি থেকে বাঁচাবে এবং আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা ব্যাহত করবে না। আমার অভিজ্ঞতা বলে, বৃষ্টির জন্য প্রস্তুত থাকলে মনের দিক থেকে অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকা যায়।
যাতায়াতের সুবিধা ও জরুরি যোগাযোগ
আপনার যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কিছু জিনিস খুব কাজে লাগে। যেমন, একটি ছোট ট্র্যাভেল বালিশ ও মাস্ক, যা দীর্ঘ ফ্লাইট বা বাস যাত্রায় আরামদায়ক হতে পারে। আমি সবসময় আমার সাথে একটি ছোট বালিশ রাখি, কারণ প্লেনের সিটে ঘুমানো আমার জন্য বেশ কঠিন। এছাড়া, নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন আপনার যাত্রাকে আরও শান্তিময় করে তুলবে। জরুরি অবস্থার জন্য, আপনার দেশের দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যোগাযোগের তথ্য আপনার ফোনে এবং কাগজে লিখে রাখুন। আপনার হোটেলের ঠিকানা ও ফোন নম্বরও হাতের কাছে রাখুন, যাতে পথ হারালে বা কোনো সমস্যা হলে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন। একটি স্থানীয় সিম কার্ড কেনা বা ইন্টারন্যাশনাল রোমিং চালু রাখাও গুরুত্বপূর্ণ, যাতে যেকোনো সময় আপনি যোগাযোগে থাকতে পারেন। আমি শ্রীলঙ্কায় পৌঁছানোর পর এয়ারপোর্ট থেকেই একটা স্থানীয় সিম কিনেছিলাম, যার ফলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সব কিছু ট্র্যাক করতে পেরেছিলাম।
| আইটেম | কেন জরুরি | বিশেষ টিপস |
|---|---|---|
| হালকা সুতির পোশাক | শ্রীলঙ্কার গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য আরামদায়ক। | সহজে শুকিয়ে যায় এমন কাপড় বেছে নিন। |
| সাঁতারের পোশাক | সৈকত ও সুইমিং পুলের জন্য অপরিহার্য। | একাধিক সাঁতারের পোশাক নিলে সুবিধা হয়। |
| সানস্ক্রিন ও সানগ্লাস | সূর্যের কড়া তাপ থেকে ত্বক ও চোখ রক্ষা করে। | SPF 30+ বা তার বেশি ব্যবহার করুন। |
| মশা তাড়ানোর স্প্রে | মশার উপদ্রব থেকে বাঁচায় ও রোগ প্রতিরোধ করে। | প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ স্প্রে বেছে নিতে পারেন। |
| ফার্স্ট এইড কিট | ছোটখাটো আঘাত বা অসুস্থতার প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য। | ব্যথানাশক, ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম রাখুন। |
| পাওয়ার ব্যাংক | মোবাইল ও অন্যান্য ডিভাইসের চার্জ ধরে রাখতে। | উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার ব্যাংক নিন। |
| ইউনিভার্সাল অ্যাডাপ্টার | বিভিন্ন দেশের ইলেক্ট্রিসিটি সকেটের জন্য। | মাল্টি-প্লাগ অ্যাডাপ্টার আরও সুবিধাজনক। |
| নগদ টাকা ও কার্ড | সব ধরনের লেনদেনের জন্য সুবিধা। | কিছু স্থানীয় মুদ্রা এবং একাধিক কার্ড রাখুন। |
글কে বিদায় জানাচ্ছি
প্রিয় ভ্রমণপিপাসু বন্ধুরা, এই ছিল শ্রীলঙ্কা ভ্রমণের জন্য ব্যাগ গোছানোর আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস। মনে রাখবেন, একটি সুপরিকল্পিত ব্যাগ গোছানো আপনার ভ্রমণকে অনেক বেশি সহজ, আরামদায়ক এবং আনন্দময় করে তুলতে পারে। আমি চাই না আমার মতো আপনারা ছোটখাটো ভুলের কারণে ভ্রমণের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হন। তাই এই পরামর্শগুলো মেনে চললে আপনার শ্রীলঙ্কা যাত্রা নিশ্চিতভাবেই অসাধারণ হবে, আমার বিশ্বাস! আপনাদের প্রতিটি মুহূর্ত হোক স্মৃতিময় এবং প্রতিটি অভিজ্ঞতা হোক শিক্ষণীয়।
কিছু দরকারি তথ্য যা আপনার কাজে আসবে
১. ভ্রমণের আগে শ্রীলঙ্কার আবহাওয়ার পূর্বাভাস অবশ্যই দেখে নিন। এতে পোশাক নির্বাচনে সুবিধা হবে এবং অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি বা তাপপ্রবাহের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
২. জরুরি অবস্থার জন্য আপনার দেশের দূতাবাস বা কনস্যুলেটের ফোন নম্বর এবং ঠিকানা নোট করে রাখুন। স্থানীয় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের নম্বরও জানা থাকলে ভালো।
৩. শ্রীলঙ্কান রুপি কিছু নগদ সাথে রাখুন, বিশেষ করে ছোটখাটো কেনাকাটা বা টিপস দেওয়ার জন্য। সব দোকানে কার্ডের ব্যবস্থা নাও থাকতে পারে।
৪. গুগল ম্যাপস (Google Maps) অফলাইনে ডাউনলোড করে রাখতে পারেন। এতে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেও দিকনির্দেশনা পেতে সুবিধা হবে এবং অজানা স্থানে হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
৫. স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন। মন্দির বা ধর্মীয় স্থান পরিদর্শনের সময় শালীন পোশাক পরুন এবং স্থানীয়দের সাথে বিনয়ের সাথে কথা বলুন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এক ঝলকে
শ্রীলঙ্কা ভ্রমণের জন্য আরামদায়ক, আবহাওয়া উপযোগী পোশাক, প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র সহ একটি ছোট ফার্স্ট এইড কিট, এবং সূর্যের কড়া তাপ ও মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেওয়া জরুরি। সব কাগজপত্র যেমন পাসপোর্ট, ভিসা এবং টিকিটের মূল কপি ও ডিজিটাল কপি সাথে রাখুন। নগদ টাকা এবং ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড উভয়ই ব্যবহার করুন। স্মার্টফোন, ক্যামেরা, পাওয়ার ব্যাংক এবং ইউনিভার্সাল অ্যাডাপ্টার আপনার যোগাযোগ এবং স্মৃতি ধরে রাখার জন্য অপরিহার্য। পরিশেষে, আরামদায়ক জুতো এবং কিছু অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য একটি ছোট ভাঁজ করা ব্যাগ ও ছাতা সাথে রাখলে আপনার ভ্রমণ হবে আরও নিশ্চিন্ত ও আনন্দময়।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: শ্রীলঙ্কার আবহাওয়া এবং সাংস্কৃতিক দিক বিবেচনা করে কী ধরনের পোশাক নেওয়া সবচেয়ে ভালো?
উ: সত্যি বলতে, শ্রীলঙ্কার আবহাওয়া অনেকটা আমাদের দেশের মতোই গরম আর আর্দ্র থাকে, তবে উঁচু পাহাড়ি এলাকায় কিছুটা ঠাণ্ডা লাগতে পারে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কলম্বো বা দক্ষিণ উপকূলের দিকে হালকা সুতির পোশাক, লিনেন বা রেয়ন খুবই আরামদায়ক। দিনের বেলায় টি-শার্ট, শর্টস, স্কার্ট বা হালকা প্যান্ট পরা যেতে পারে। তবে যখন বুদ্ধ মন্দির বা অন্য কোনো ধর্মীয় স্থানে যাবেন, তখন কাঁধ আর হাঁটু ঢাকা পোশাক পরাটা জরুরি। এটা শুধুমাত্র শ্রদ্ধার ব্যাপার নয়, সেখানকার সংস্কৃতিকে সম্মান জানানোও বটে। আমার মনে আছে, একবার আমি ভেবেছিলাম হালকা স্কার্ট নিয়ে যাব, কিন্তু মন্দিরে ঢোকার সময় লুঙ্গি পরতে হয়েছিল!
তাই একটা শাল বা স্কার্ফ সাথে রাখতে পারেন, যেটা প্রয়োজনে কাঁধ বা মাথা ঢাকতে কাজে দেবে। আর ক্যান্ডি বা নুয়ারা এলিয়ার মতো শীতল জায়গায় রাতের জন্য একটা পাতলা জ্যাকেট, কার্ডিগান বা শাল রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। সাঁতার কাটার পরিকল্পনা থাকলে অবশ্যই সুইমিং স্যুট নিতে ভুলবেন না!
জুতার ক্ষেত্রে, আরামদায়ক স্যান্ডেল বা ফ্লিপ-ফ্লপই সেরা।
প্র: শ্রীলঙ্কা ভ্রমণের সময় স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য কোন জিনিসগুলো অবশ্যই সাথে রাখা উচিত?
উ: ভ্রমণ মানেই নতুন অভিজ্ঞতা, কিন্তু স্বাস্থ্যের দিকটা একদমই অবহেলা করা যাবে না। আমি সব সময় ব্যক্তিগত কিছু জিনিস সাথে রাখার চেষ্টা করি। মশা তাড়ানোর জন্য ভালো মানের মশা তাড়ানোর স্প্রে বা ক্রিম শ্রীলঙ্কায় খুবই দরকারি, বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে। আমার নিজেরই একবার মশার কামড়ে বেশ অস্বস্তি হয়েছিল!
সানস্ক্রিন ছাড়া শ্রীলঙ্কায় এক পা-ও চলা যায় না, সেখানকার রোদ বেশ তীব্র। SPF 30 বা তার বেশি থাকলে ভালো হয়। একটি ছোট ফার্স্ট এইড কিট অবশ্যই ব্যাগে রাখবেন, যেখানে ব্যান্ড-এইড, অ্যান্টিসেপটিক ওয়াইপস, ব্যথানাশক (যেমন প্যারাসিটামল), পেটের ওষুধের মতো সাধারণ জিনিসপত্র থাকবে। নতুন খাবার বা পানির কারণে পেটের সমস্যা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। হ্যান্ড স্যানিটাইজারও খুব কাজে আসে, কারণ সব সময় হাত ধোয়ার সুযোগ নাও থাকতে পারে। আর ডিহাইড্রেশন এড়াতে কিছু ORS (ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন) স্যালাইন সাথে রাখুন। গরমের মধ্যে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে।
প্র: স্মার্ট ট্র্যাভেলিং এর জন্য অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিয়ে কীভাবে ব্যাগ গোছানো যায় এবং কোন গ্যাজেটগুলো কাজে লাগতে পারে?
উ: স্মার্ট ট্র্যাভেলিং মানেই কম জিনিস নিয়ে ভালোভাবে ভ্রমণ করা, এতে শুধু আপনার কাঁধেরই আরাম হবে না, বিমানবন্দরের ঝামেলাও কমবে। আমি যখন প্রথমবার গিয়েছিলাম, অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ব্যাগ ভারী করে ফেলেছিলাম, পরে আফসোস হয়েছিল!
এখন আমি সবসময় চেষ্টা করি রোল করে কাপড় গোছাতে, এতে অনেক জায়গা বাঁচে আর পোশাকগুলো কম কুঁচকে যায়। প্যাকিং কিউবগুলোও খুব কাজের, এগুলো দিয়ে জিনিসপত্র সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখা যায়। অপ্রয়োজনীয় জুতো বা বই বাদ দিন। ডিজিটাল কপি হিসেবে আপনার পাসপোর্ট, ভিসা এবং টিকিট মোবাইলে বা ক্লাউড স্টোরেজে রাখাটা খুবই বুদ্ধিমানের কাজ।গ্যাজেটের কথায় আসি, কিছু জিনিস আছে যা ছাড়া আমার ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। একটি ভালো পাওয়ার ব্যাংক অবশ্যই সাথে নেবেন, কারণ সারাদিন ছবি তোলা, গুগল ম্যাপ ব্যবহার করা বা বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করার জন্য ফোনের চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যেতে পারে। শ্রীলঙ্কায় বিভিন্ন ধরনের প্লাগ সকেট দেখা যায়, তাই একটি ইউনিভার্সাল অ্যাডাপ্টার খুবই জরুরি। ক্যামেরা যারা ভালোবাসেন, তারা অবশ্যই DSLR বা ভালো মানের একটি মিররলেস ক্যামেরা নেবেন, কারণ শ্রীলঙ্কার প্রাকৃতিক দৃশ্য অসাধারণ!
সমুদ্রের ধারে বা বর্ষার সময় ফোন সুরক্ষিত রাখতে একটি ওয়াটারপ্রুফ ফোন পাউচ দারুণ কাজে আসে। ই-বুক রিডার থাকলে দীর্ঘ যাত্রায় বই পড়ার জন্য কাগজের বইয়ের চেয়ে অনেক ভালো। সব মিলিয়ে কম জিনিস আর কিছু স্মার্ট গ্যাজেট আপনার শ্রীলঙ্কা ভ্রমণকে আরও সহজ ও আনন্দময় করে তুলবে, এটা আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি!






